বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও
পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি
বিশেষ অঞ্চল,
যেখান বেশ
কিছু জাহাজ
ও উড়োজাহাজ
রহস্যজনক ভাবে
নিখোঁজ হওয়ায়
কথা বলা
হয়।
অনেকে মনে
করেন ঐ
সকল অন্তর্ধানের
কারণ নিছক
দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে
প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার
চলতি উপকথা
অনুসারে এসবের
পেছনে দায়ী
হল কোন
অতিপ্রকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর
উপস্থিতি।
তবে
এ বিষয়ে
পর্যাপ্ত তথ্য
রয়েছে যে
, যেসব দূর্ঘটনার
উপর ভিত্তি
করে বারমুডা
ট্রায়াঙ্গেলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার
বেশ কিছু
ভুল, কিছু
লেখক দ্বারা
অতিরঞ্জিত হয়েছে এমনকি কিছু দূর্ঘটনার
সাথে অন্যান্য
অঞ্চলের দূর্ঘটনার
কোনই পার্থক্য
নেই।
এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে
মেক্সিকো উপসাগর
থেকে উষ্ণ
সমুদ্র স্রোত
বয়ে গেছে। এই
তীব্র গতির
স্রোতই মূলত
অধিকাংশ অন্তর্ধানের
কারণ।
এখানকার আবহাওয়া
এমন যে
হঠাৎ করে
ঝড় ওঠে
আবার থেমে
যায়, গ্রীষ্মে
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বিংশ
শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট
প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে
জাহাজডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই
অঞ্চল বিশ্বের
ভারী বাণিজ্যিক
জাহাজ চলাচলকারী
পথগুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো
আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান
দ্বীপপূঞ্জে যাতায়াত করে। এছাড়া
এটি হল
প্রচুর প্রমোদতরীর
বিচরণ ক্ষেত্র। এ
অঞ্চলের আকাশপথে
বিভিন্ন রুটে
বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল
করে।
ত্রিভূজের বিস্তৃতির বর্ননায় বিভিন্ন লেখক
বিভিন্ন মত
দিয়েছেন।
কেউ মনে
করেন এর
আকার ট্রাপিজয়েডের
মত, যা
ছড়িয়ে আছে
ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান
দ্বীপপূঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক
অঞ্চল জুড়ে,
আবার কেউ
কেউ এগুলোর
সাথে মেক্সিকোর
উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে
লিখিত বর্ণনায়
যে সাধারণ
অঞ্চলের ছবি
ফুটে ওঠে
তাতে রয়েছে
ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য
আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপূঞ্জ এবং বাহামা
ও ফ্লোরিডা
স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান
ঘটেছে অধিকাংশ
দূর্ঘটনা।
মেরিন বীমা
কোম্পানী “লয়েড'স অব লন্ডন”(Lloyd's
of London) দেখেছে যে , এই
ত্রিভূজে অন্য
সমুদ্রের চেয়ে
উল্লেখ্য করবার
মত ভয়ংকর
কিছু নেই। তাই
তারা এই
অঞ্চল দিয়ে
গমনকারী কোন
জাহাজের উপর
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাশুল আদায়
করে না। যুক্তরাষ্ট্রের
কোস্ট গার্ড
লেখকদের বর্ণনার
উপর ব্যাপক
অনুসন্ধানের পর অনুমোদন করেছে এই
অঞ্চলে অস্বাভাবিক
কিছু নেই। উদাহরণ
হিসেবে বলা
যায়- ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ
(V.A. Fogg) নামের একটি ট্যাঙ্কার
মেক্সিকো উপসাগরে
বিষ্ফোরণেরর পর ডুবে যায়।
কোস্ট গার্ডরা
সে বিধ্বস্ত
ট্যাঙ্কারের ছবি তোলেন এবং বেশ
কিছু মৃত
দেহও উদ্ধার
করেন।
কিন্তু
কতিপয় লেখক
বলেছেন ঐ
ট্যাঙ্কারের সব আরোহী অদৃশ্য হয়ে
গেছে, শুধুমাত্র
এর ক্যাপ্টেনকে
তার কেবিনের
টেবিলে হাতে
কফির মগ
ধরা অবস্থায়
পাওয়া গিয়েছে। টিভি
সিরিয়াল NOVA / Horizon এর “ দ্যা
কেস অব
দ্যা বারমুডা
ট্রায়াঙ্গেল (১৯৭৬-০৬-২৭)” পর্বে
বলা হয়েছিল
, যে সব
দূর্ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলো
ভিত্তিহীন।সংশয়বাদী গবেষকগণ,
যেমন আর্নেস্ট
ট্যাভস ( Ernest Taves) এবং ব্যারি
সিংগার( Barry Singer), দেখিয়েছেন যে
, মিথ্যে রহস্য
তৈরি করা
বেশ লাভজনক। কারণ
তখন ঐ
মিথ্যে রহস্যের
উপর ভিত্তি
করে বই
লিখে বা
টিভিতে বিশেষ
অনুষ্ঠান প্রচার
করে প্রচুর
অর্থ কামানো
যায়।বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল টি কিছু স্থলভাগের উপর দিয়েও গিয়েছে যেমন পোর্তো রিকো ( Puerto Rico), বাহামা এমন কি বারমুডা নিজেই। কিন্তু এসব জায়গায় কোন স্থলযানের নিখোঁজ হবার খবর জানা যায়নি। এছাড়া এই ত্রিভূজের মধ্যে অবস্থিত ফ্রীপোর্ট শহরে বড়সড় জাহাজ কারখানা রয়েছে আর রয়েছে একটি বিমান বন্দর, যা কোন গোলযোগ ছাড়াই বছরে ৫০,০০০ টি বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
কন্টিনেন্টাল সেলভে(continental shelve) জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষাগারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাতাসের বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই সাগরে যখন পর্যায়ক্রমিক মিথেন উদগীরন হয়, তখন পানির প্লবতা(কোন কিছুকে ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা) কমে । যদি এমন ঘটনা ঐ এলাকায় ঘটে থাকে তবে সতর্ক হবার আগেই কোন জাহাজ দ্রুত ডুবে যেতে পারে।
১৯৮১ সালে “ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে” একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বর্ণিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উপকূলের বিপরীতে ব্ল্যাক রিজ(Blake Ridge) এলাকায় মিথেন হাইড্রেট রয়েছে। আবার ইউএসজিএস(ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে) এর ওয়েব পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, গত ১৫০০ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় তেমন হাইড্রেট গ্যাসের উদগীরন ঘটেনি।
কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িত। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যূতি আসে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র উইসকনসিন(Wisconsin) থেকে মেক্সিকোর উপসাগর(Gulf of Mexico) পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিক ভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। এই সাধারণ তথ্য যে কোন দক্ষ পথপ্রদর্শকের জানা থাকার কথা। কিন্তু সমস্যা হল সাধারণ মানুষকে নিয়ে, যারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ঐ ত্রিভুজ এলাকা জুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যূতি তাদের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
No comments:
Post a Comment