Friday, December 23, 2016

নায়ক রিয়াজের জীবনগল্প | Actor Riaz's Biography

নায়ক রিয়াজের  জীবনগল্প | Actor Riaz's Biography:

 

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক : জন্মঃ ২৬ অক্টোবর ১৯৭২, যিনি রিয়াজ নামেই বেশি পরিচিত, হলেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলার নায়ক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন ১৯৯৭ সালে মহাম্মদ হান্নান পরিচালিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্রে রিয়াজ অভিনয় করেন যা ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় এবং একইসঙ্গে রিয়াজকে জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে তিনি বাংলাদেশের অনেক প্রখ্যাত পরিচালকের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেনএছাড়াও রিয়াজ ভারতীয় চলচ্চিত্রকার অভিনেতা মহেশ মাঞ্জরেকারের ইট ওয়াজ রেইনিং দ্যাট নাইট নামে একটি ইংরেজী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই চলচ্চিত্রে রিয়াজ বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের সাথে কাজ করেছেন
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত করে। পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলি যথাক্রমে দুই দুয়ারী (২০০০), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭)এবং কি যাদু করিলা (২০০৮) রিয়াজ অভিনীত সাম্প্রতিকতম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র লোভে পাপ পাপে মৃত্যু ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে মুক্তি লাভ করে নানা মাধ্যম কাজে সক্রিয় অভিনেতা রিয়াজ চ্যানেল আইয়েরহ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান  প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় মৌসুমে প্রধান বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা'য় সাম্প্রতিক দেয়া সাক্ষাত্কারে রিয়াজ জানান:
খুব শীঘ্রই তিনি পুরোদমে চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হতে যাচ্ছেন এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে নতুন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করবেন পাশপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনার কথাও বলেছেন।“

রিয়াজ ১৯৭২ সালে ফরিদপুর জেলা সদরের কমলাপুর মহল্লায় একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে ফরিদপুর শহরের সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টার্সের চৌহদ্দিতে তাঁর বাবা জাইনুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন সরকারি অফিসের একজন কর্মকর্তা; মাতা মৃত আরজুমান্দ আরা বেগম গৃহিণী রিয়াজ পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হলেন বড় ভাই রাইজুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক এবং ছয় বোন জিন্ন্যা আরা, সুলতানা জাহানারা সিদ্দিক, সুলতানা রওনক আরা, সুলতানা রওশন জামিল, সুলতানা সালমা শাহীন সুলতানা ফাতেমা শিরিণ সকলেই বিবাহিত ছোটবেলায় রিয়াজের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হবেন |  পরে পরিবারের বড়দের উৎসাহে যশোরে বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং উত্তীর্ণ হন যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বিমানচালক হিসেবে যোগদান করেন বৈমানিক হিসাবে তিনি একটি জেট ফাইটারে মোট ৩০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অধীনে তুরস্ক গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন পরবর্তীকালে কর্তৃপক্ষের সাথে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিমানবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন
চাকরিচ্যুতির পর তিনি বাড়ি ছেড়ে ঢাকা শহরে পাড়ি জমান এবং চাচাতো বোন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতার হাত ধরে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একজন অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনঅভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হৃদয়ের কথা চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন বর্তমানে রিয়াজ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি ঢাকার বনানীতে ইয়েস কর্পোরেশন নামে একটি কোমল পানীয় উৎপাদনকারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রয়েছেন এছাড়াও হাউজিং কোম্পানি আশিয়ান গ্রুপ-এর পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেনসম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে রিয়াজ ইঙ্গিত দেন যে, তিনি বর্তমানে ব্যবসা চাকরি থেকে দূরে রয়েছেন

রিয়াজ তার ছেলেবেলা থেকেই উদ্যমী, খেলাধুলাপ্রিয়, লেখাপড়ায় উজ্জ্বল ছিলেন তিনি স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৭ সালে ফরিদপুর জেলা সদরে অবস্থিত তারার মেলা উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন পরে ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন, সেখানে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন পরবর্তীতে ফরিদপুর সদরে অবস্থিত ময়েজউদ্দীন হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এসএসসি পাশ করেন এরপর ফরিদপুর থেকে চলে আসেন পৈতৃক বাসস্থান যশোর জেলায় তাঁর কলেজ জীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির মাধ্যমে এবং সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করেন এরপর বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকা এসে কোচিং শুরু করেন, কিন্তু পরিবারের বড়দের উৎসাহে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমীতে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত অধ্যয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এরই মধ্যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি সম্পূর্ণ করেন ১৯৯১ সালে তুর্কি সরকারের দেয়া একটি বৃত্তিতে তিনি টি-থার্টি-সেভেন বিমানের উপরে একটি প্রশিক্ষণ নিতে ক্যাডেট হিসেবে তুরস্ক যান প্রশিক্ষণটিতে তিনি ভাল ফলাফল অর্জন করেন, যার ফলশ্রুতিতে তুর্কি সরকার তাঁকে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করে কিন্তু বিভিন্ন রকমের প্রক্রিয়াকরণের দরূন প্রশিক্ষণটি নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি বাংলাদেশে ফিরে তিনি বিমান বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং একজন বিমান চালক হিসেবে নিয়োগ পান

রিয়াজ চলচ্চিত্রে বিভিন্ন নায়িকার সাথে জুটি বেঁধে দীর্ঘদিন একসাথে অভিনয় করেছেন এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো শাবনূর পূর্ণিমা অনেক দিন একসাথে কাজ করার ফলে সখ্য গড়ে উঠে এই দুই অভিনেত্রীর সাথে ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে রিয়াজ-শাবনূরের প্রেমের খবর প্রকাশ হতে থাকেএমনকি তাদের প্রেম গোপন বিয়ের খবর ঝড় তুলেছিল ২০০০ সালের প্রথম পর্যন্ত চলচ্চিত্র এবং অঙ্গনের বাইরে এছাড়া পূর্নিমার সাথেও তার সম্পর্কের খবরও কিছুদিন লোকমুখে শোনা গিয়েছিল রিয়াজ ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৪-এর বিনোদন বিচিত্রার ফটো সুন্দরী বিজয়ী মডেল মুশফিকা তিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বিয়ের প্রায় আট বছর পর ২০১৫ সালের জুন তিনি কন্যা সন্তানের পিতা হন
রিয়াজের নিজ পরিবারের কেউ অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাঁর তিন চাচাতো বোন কোহিনুর আক্তার সুচন্দা, ফরিদা আক্তার ববিতা গুলশান আরা চম্পা বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ছোটবেলায় জনপ্রিয় টিভি সিরিজ টারজান এবং বাংলাদেশী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র টারজান তরুণ রিয়াজের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল এছাড়াও টম ক্রুজ অভিনীত হলিউড সুপারহিট চলচ্চিত্র টপ গান এবং পুনর্নির্মিত টারজান চলচ্চিত্রও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল ১৯৯৪ সালে তিনি চাচাতো বোন ববিতার সাথে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-তে ভ্রমণে এসে প্রয়াত অভিনেতা-প্রযোজক জসিম-এর নজরে পড়েন জসিম যখন তাঁকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তখন তিনি অভিনয় সম্পর্কে কিছুই জানতেন না এক্ষেত্রে ববিতা তাঁকে উৎসাহিত করেন, কিন্তু তাঁর মা ছিলেন ধর্মভীরু, তাই তার মাকে রাজি করাতে একটু সময় লেগে গিয়েছিল অবশেষে রিয়াজ ববিতার হাত ধরেই চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন

রিয়াজের আরেকটি সফল জুটি গড়ে উঠেছিল সে সময়ের নবাগতা, অভিনেত্রী পূর্ণিমার সাথে ১৯৯৭- মুক্তি পায় রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটি অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র জীবন তোমার আমার চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন পরিচালক জাকির হোসেন রাজু এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই পূর্ণিমার অভিনয় জীবন শুরু হয়।।  ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটির সব চাইতে সফল চলচ্চিত্র মনের মাঝে তুমি এটি পরিচালনা করেন প্রবীণ পরিচালক মতিউর রহমান পানু এই চলচ্চিত্রটি দর্শকপ্রিয়া অর্জনে সফল হয়েছিল এটি বাংলাদেশ ভারত-এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল এটি রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটির বড় সাফল্য এবং সেই সাথে এটি ছিল সকল শ্রেণীর দর্শকদের জন্য তাঁদের পক্ষ থেকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার
রিয়াজ-পুর্ণিমা জুটি এই পর্যন্ত ত্রিশটিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে মুক্তি পায় সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত লোভে পাপ পাপে মৃত্যু এবং এটিই রিয়াজ-পুর্ণিমা জুটির সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করে |



 


No comments:

Post a Comment