দিনটা ছিল ২০০৪ সালের এপ্রিল ফুলের দিন। আমেরিকায় গুগলের অফিসে নতুন নিয়োগের ইন্টারভিউ চলছে। অন্যদের সঙ্গে সেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন এক তামিল যুবক। নাম পিচাই সুন্দরারাজন। তবে, আইআইটি খড়্গপুরের বন্ধুরা সকলে তাঁকে চেনে সুন্দর পিচাই বলে। মেটালারজিতে আইআইটি থেকে বি টেক ডিগ্রি পাওয়ার পরে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমএস করেছেন। এরপর আবার পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ইন্টারভিউতে সুন্দর পিচাইকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ‘জিমেল’ জানেন? সুন্দরের মনে হয়েছিল এপ্রিল ফুলের দিন হয়তো তাঁকে ‘বোকা’ বানানোর জন্য এই প্রশ্ন করা হচ্ছে!
এই ইন্টারভিউয়ের পরে কেটে গিয়েছে ১০ বছর। গুগল তাঁদের নতুন সিইও হিসাবে নির্বাচিত করল প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনচার্জ সুন্দর পিচাই-কে।
এই ঘটনার পর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি। ছাত্রদের উন্মাদনায় কেঁপে উঠল আইআইটি খড়্গপুর। কারণ, ক্যাম্পাসে এসেছেন গুগল সিইও তথা এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সুন্দর পিচাই। মঞ্চে সুন্দর আসতেই চারিদিকে শব্দ বিস্ফোরণ। আপ্লুত হয়ে গেলেন গুগল সিইও। নিজেই জানালেন, ২০০৪ সালে যখন বি টেক ডিগ্রি নিয়ে খড়্গপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চাপছিলেন চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠেছিল। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি খড়্গপুর আইআইটি-তে এসে তিনি যে সম্ভাষণ পেলেন, তা তিনি পাবেন তা নাকি কোনওদিনই ভাবেননি।
আবেগতাড়িত সুন্দর বলে ফেলললেন তাঁর আইআইটি-তে কাটানো দিনগুলির কথা। ভাষা-সমস্যায় কীভাবে একজনকে সম্ভাষণ করতে গিয়ে হিন্দিতে ‘আব্বে শা...’ বলে ফেলেছিলেন তা-ও খড়্গপুর আইআইটি ওপেন থিয়েটারের আসা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শেয়ারও করলেন। কীভাবে সহপাঠিনী আইআইটি-র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী অঞ্জলির প্রেমে পাগল হয়েছিলেন তাও বললেন সুন্দর। অঞ্জলি এখন সুন্দরের সহধর্মিনী।
গুগলের সিইও হওয়ার কাহিনি আর ডিজিটাল ভারত নিয়ে তাঁর আশা— সমস্তকিছুই অকপটে গল্প করলেন সুন্দর। আলাপের মাঝেই খোঁজ নেন, তিনি যেখানে থাকতেন সেই নেহরু হলের। অনুষ্ঠান শেষে সেই নেহরু হলেও যান তিনি। ঘুরে দেখেন তাঁর এককালের আঁতুড়ঘর। যেখানে গড়ে উঠেছিল ভবিষ্যৎ জীবনের দিশা।
তবে, ক্যাম্পাস ছাড়ার আগেই সুন্দরের একটাই বার্তা— যদি জীবনে বড়কিছু করতে হয় তাহলে ‘ঝুঁকি’ নেওয়া শেখো। কারণ, ‘ঝুঁকি’ নেওয়ার ক্ষমতা দেখালেই আসবে নতুন ভোর, নতুন সূর্য। যার জ্বলন্ত উদাহরণ সুন্দর পিচাই।
সূত্র: এবেলা
No comments:
Post a Comment