সভ্যতার প্রথমলগ্ন থেকেই
মানুষ জানতে চেয়েছে
আগামীকে। ভবিষ্যৎ জানার
জন্য মানুষ যা
করেছে, তার হিসাব
নিতে বসলে মাথা
খারাপ হওয়ার যথেষ্ট
সম্ভাবনা রয়েছে। সুদূর গ্রহতারা থেকে
শুরু করে হাতের
রেখা, কোনও কিছুকেই বাদ
দেয়নি মানুষ। জ্যোতিষ, করকোষ্ঠী, ট্যারো
কার্ডস ইত্যাদি তো
রয়েছেই, তার উপরে
যুগ যুগ ধরে
এমন কিছু পদ্ধতি
মানুষ ভাগ্য জানার
জন্যে ব্যবহার করে
এসেছে, যার কার্যকারণ বের
করাটাই দুরূহ।
এমনই
এক পদ্ধতি হল
‘ট্যাসিওগ্রাফি’। আপাতদৃষ্টিতে পদ্ধতিটি নেহাতই
সরল। কিন্তু এর
ব্যবহার করাটা কঠিন।
খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা
যায়, ‘ট্যাসিওগ্রাফি’ শব্দটির মধ্যে
রয়েছে আরবি ‘ট্যাসা’
শব্দটি, যার অর্থ
হল ‘চা’।
তার সঙ্গে যুক্ত
হয়েছে গ্রিক ‘গ্রাফ’
শব্দটি, যার অর্থ
‘লিখন’। সেদিক
থেকে ভাবলে, ট্যাসিওগ্রাফি এর
অর্থ দাঁড়ায়— ‘চায়ের
লিখন’। ট্যাসিওগ্রাফার কোনও
ব্যক্তিকে এক কাপ
চা পান করতে
বলেন। চা পান
করার পরে, চায়ের
কাপে চা-পাতা
পড়ে থাকে। সেই
পড়ে থাকা চা-পাতার প্যাটার্ন দেখেই
নাকি বলে দেওয়া
হয় সেই ব্যাক্তির ভাগ্য।
আনুমানিক সপ্তদশ
শতক থেকে ইউরোপে
ট্যাসিওগ্রাফি
এক জনপ্রিয় ভবিষ্যকথন পদ্ধতি
হিসেবে আবির্ভূত হয়।
কেবল চা নয়,
কফি বা ওয়াইন
সেডিমেন্টকে ঘিরেও শুরু
হয় ট্যাসিওগ্রাফি। তবে
চায়ের জনপ্রিয়তাই ছিল
সর্বাধিক। কারণ ওই
সময়ে ইউরোপে চায়ের
জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। আর
চিন থেকে আগত
এই পানীয়কে ঘিরে
ইউরোপীয়দের কৌতূহলও তখন
তুঙ্গে।
পরে
থাকা চা-পাতার
প্যাটার্ন থেকে ভাগ্য
জানার পদ্ধতিকে সুগম
করার জন্য তৈরি
হতে শুরু করে
বিচিত্রদর্শন সব কাপ।
কোনওটির ভিতরে জ্যোতিষ-চিহ্ন,
কোনওটিতে রাশিচক্র আবার
কেনোটিতে তাসের ছবি
ছাপা হতে শুরু
করে। তৈরি হতে
থাকে ট্যাসিওগ্রাফি-র
নিজস্ব চিহ্ন সম্বলিত কাপও।
এই
চিহ্নের ব্যাপারটা অবশ্যই
কিছুটা গোলমেলে। পড়ে
থাকা চা-পাতার
প্যাটার্ন কখন সাপের
মতো, কখন পাহাড়ের মতো,
কখন বা তার
মধ্যে দেখা যায়
অন্য কোনও জন্তুর
ছায়া। এর প্রত্যেকটিই এক
একটি ট্যাসিওগ্রাফি-প্রতীক। এদের
প্রত্যেকেরই মানে আলাদা।
সাধারণ মানুষের পক্ষে
একে বোঝা দুরূহ।
কিন্তু মজার ব্যাপার এই
যে, সেই ১৭
শতক থেকে আজ,
এই দীর্ঘ কালপর্বে ট্যাসিওগ্রাফি নিয়ে
পশ্চিমের কৌতূহল এক
ইঞ্চিও কমেনি। এই
মুহূর্তে ইন্টারনেটেও ট্যাসিওগ্রাফি-র
রমরমা যথেষ্ট। ট্যারো
বা সাধারণ জ্যোতিষের চাইতে
নাকি অনেক বেশি
কার্যকর এই চা-পাতার পাঠ।
কিন্তু
আরও মজার ব্যাপার এই,
ট্যাসিওগ্রাফি-কে কিন্তু
একেবারেই পাত্তা দেননি
হ্যারি পটার-সিরিজের রচয়িতা
জে কে রাওলিং। গোটা
সিরিজ জুড়ে তিনি
মজা করে গিয়েছেন ট্যাসিওগ্রাফি নিয়ে।
No comments:
Post a Comment